৯ অক্টোবর ২০২৪
১০ অক্টোবর ২০২৪ অধিকার এর ৩০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংকল্প নিয়ে ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মানবাধিকার কর্মীদের সংগঠন অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। অধিকার তার ৩০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিগত ১৫ বছরে এবং ২০২৪ এর জুলাই-অগাস্ট মাসের চূড়ান্ত লড়াইয়ে যারা হতাহত হয়েছেন তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অধিকার বিভিন্ন বাধা মোকাবেলা করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। সারাদেশে মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের নিয়ে অধিকার এর একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন-নিপীড়ন, সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের মানবাধিকার লংঘণ, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এবং দায়মুক্তির বিরুদ্ধে অধিকার তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সোচ্চার থেকেছে। এছাড়া অধিকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সদস্য হিসেবে মানবাধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যেয়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে অধিকার হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অধিকার এর ওপর নিপীড়ন শুরু করে, যা পরবর্তীতে ২০১৩ সাল থেকে গ্রেফতার, হয়রানীর মাধ্যমে চরম আকার ধারণ করে। ২০২২ সালের ৫ জুন অধিকার এর রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্ত এনজিও বিষয়ক ব্যুরো’ অস্বীকৃতি জানায় এবং সরকারপন্থীরা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক সংবাদমাধ্যমে অধিকার এর বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রোপাগান্ডা চালায়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে অধিকার এর তৎকালিন সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানকে সরকারী মদদে ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এএম জুলফিকার হায়াৎ তাঁদের দুই বছরের কারাদন্ড এবং উভয়কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম মানবাধিকার কর্মীদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
অধিকার এবং এর মানবাধিকার কর্মীরা রাষ্ট্রিয় বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হলেও মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলন থেকে কখনো সরে দাঁড়ায়নি। এই সময়ে অধিকার এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার কর্মীরা মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ থাকায় এবং ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কারণে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে থেকেছেন এবং সভা-সমাবেশ করার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখিন হয়েছেন। জুলাই অগাস্টের ছাত্র জনতার অভূত্থানেও অধিকার এর কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
৫ অগাস্ট ২০২৪ এ বাংলাদেশের জনগন কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয় এবং এরপর একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। অধিকার এর ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি অধিকার এর আহবান থাকবে- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা মোতাবেক সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে মানবাধিকার সমুন্নত থাকবে।
This post was originally published on News – Odhikar.